বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

'নাহিদ' - সুদর্শন আর একেবারেই পাগলাটে একটা ছেলে। সারাদিন কাধে একটা গীটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভার্সিটির সবাই ওকে গীটার-বয় বলেই ডাকে। নেকা মেয়ে গুলা যেন নাহিদ বলতেই অজ্ঞান। অথচ দুই চক্ষে সহ্য হয়না ছেলেটাকে আমার। বি.বি.এ -৩য় বর্ষের ছাত্রী আমি। নাহিদ আমার ১বছর এর সিনিয়র। কোন কথাবার্তা ছাড়াই ও হঠাৎ একদিন আমকে প্রপস করে বসলো। কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলাম। পেছন ঘুর ঘুর করে বিরক্ত করার ছেলে ও না। কোথা থেকে যেন আমার নাম্বারটা যোগাড় করেছে।
প্রতিদিন রাতে শুধু একটা করে মেসেজ করত কখনো ফোন করেনি। কোন রিপ্লাই না দিয়ে শুধু ওর মেসেজ গুলো পড়তাম প্রতিদিন। ব্যাপারটা ধীরে ধীরে ভাল লাগতে শুরু করলো। মনের আড়ালেই কখন ভাল লাগার বীজ বপন করে বসে আছি বুজতেই পারিনি।
পরপর তিনদিন ওর কোন মেসেজ না পেয়ে কেমন যেন অস্থির লাগছিল। পরদিন ভার্সিটিতে মনে মনে ওকে খুজতে থাকলাম। হঠাৎ দেখি সিমির খুব কাছাকাছি বসে ওকে গান শোনাচ্ছে। বুকের ভেতর চেপে থাকা আগুনটা যেন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। কিছু চিন্তা না করেই সবার সামনে বলে দিলাম ওকে ভালবাসার কথা। সাথে সাথে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পেছন থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে দিল।
খানিকটা অবাক হলাম। পরে জানতে পারলাম মেসেজ না করা, আমাকে জেলাস করা, পুরোটাই সাজানো ছিল। আর তার প্রধান হাতিয়ার ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী সিমি। চোখের জলটা থামাতে পারলাম না। সবার সামনেই কেদে দিলাম। একটা কান্না মানুষকে এতটা সুখ দিতে পারে জীবনে প্রথম অনুভব করলাম।
শুরু হল ভালবাসার আকাশে কষ্ট সুখের সাত রঙ মিশিয়ে একি স্বপ্ন দুটি হৃদয় দিয়ে আঁকা। ও আমাকে সুখ পাখি বলে ডাকে। ওর পাগলামি গুলা যেন একি সাথে আমকে কাদাই আবার হাসাই। অদ্ভুত একটা অনুভুতি।
আমকে নিয়ে ওর গান। স্বপ্নের ভেলায় চড়ে তারার দেশে যাওয়া। হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। মাঝ রাতে আমকে দেখার নাম করে আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা। ক্লাস ফাকি দিয়ে মুভি দেখতে যাওয়া। একই স্বপ্ন হাজার বার ভেঙ্গে নতুন করে গড়া। সব কিছু মিলিয়ে যেন আমার একটা পৃথিবী সুখের স্বর্গ ও। দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। ওর বি.বি.এ শেষ হল আর আমি ৪র্থ বর্ষে উঠলাম। যে ভয়টা বুকের ভেতর সব সময় কাজ করত সেটাই হল। আমার আর নাহিদ এর সম্পর্কের কথাটা বাসাই জানা জানি হয়ে গেল।
আব্বু আম্মুর ইচ্ছের বাইরে আপু পালিয়ে গিয়ে তার ক্লাস-মেট সোহেল ভাইয়াকে বিয়ে করেছিল। ওদের ৪বছর এর রিলেশন বিয়ের এক বছরের মাথাই ছাড়াছাড়ি। এ ব্যাপারটাই যেন আমার স্বাধীনতার একমাত্র ঘাতক। সাময়িক ভাবে আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ। ফোনটাও আব্বুর কাছে। এক কথায় বন্দি আমি।
আপুর ব্যাপারটার পর আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছিল এখনো সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আব্বুর ইচ্ছের বাইরে কিছু বলা মানে তাকে মৃত্যুর পথে একধাপ এগিয়ে নেয়া। কিছুই বলতে পারলাম না।
এক সপ্তাহের মধ্যে আমার বিয়ে ঠিক করলো আব্বুর ব্যবসায়ী বন্ধু রাজ্জাক আঙ্কেলের ছেলে সুমন এর সাথে। নিঃশব্দে কাদা ছাড়া কিছুই যেন করার নেই আমার।
এদিকে নাহিদ পাগল এর মত চেষ্টা করছে আমার সাথে যোগাযোগ করার। কোন উপায় না পেয়ে সিমিকে আমার বাসায় পাঠালো খোজ নেবার জন্য। মানুষটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে। এত বড় অন্যায় কি করে করবো আমি। কি করে কাদাবো এই মানুষটাকে। ঠিক করলাম পালিয়ে যাব। সবাইকে ফাকি দিয়ে অনেক কষ্ট করে বাসা থেকে বেরও হলাম। কিন্তু আপুর চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মুর কষ্ট লজ্জা সব কিছুর ছবিটা চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠলো। পারলাম না।
একটা ফোন ফ্যাক্স এর দোকান থেকে কাদতে কাদতে নাহিদ কে সরি বলে অর্ধেক রাস্তা থেকেই আবার বাসাই ফিরে আসলাম। এসে দেখি প্রত্যাশা অনুরূপ বাসার সবাই চুপচাপ বসে আছে। যে আব্বু আমকে কোন দিন ধমক দিয়ে কথা বলিনি সে আব্বু আমার গায়ে হাত তুললো। সারা রাত কাদলাম। কান্নাই যেন একমাত্র সঙ্গী এখন। না পারছি আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে না পারছি নাহিদকে কাদাতে।
পরদিন সকালে রাজ্জাক আঙ্কেল এর একটা ফোন আমার জীবনটাতে একই সাথে মুক্তি আর পঙ্গুত্ব দান করলো। ডাক্তার এর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী আমি কোনদিন মা হতে পারবো না। বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। কাঁদবো না মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলব বুজতে পারলাম না। শুধু স্থব্দ হয়ে থাকলাম।
নাহিদ এর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখ আমার নেই। সিমির মাধ্যমে ও সব কিছু জানলো। আর সব জেনে শুনেই ওর আব্বুকে দিয়ে আবারও বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল আমার বাসাই। প্রথম বার ফিরিয়ে দিলেও এবার আর পারল না। কারণটা সহজ। আব্বু আম্মু স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা লজ্জিত হয়ে নাহিদ এর এক আকাশ সমান ভালবাসার কাছে হার মানল। পাওয়া না পাওয়াই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের আর সুখের দিন এটা।
পরদিন নাহিদ এর অনুরোধেই আব্বু আম্মুর অনুমতি নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম । কথা বলার শক্তিটা যেন হারিয়ে ফেলছি। কাপতে কাপতে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল- আমি শুধু তোমাকে চাই হেনা আমার আর কিচ্ছু দরকার নেই বিশ্বাস করো আমার শুধু তোমাকে হলেই চলবে। বল আমকে আর কখনো ছেড়ে যাবা নাতো ?উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না। বুক ফেটে কান্না এলো। ওর এই সীমাহীন ভালবাসার কাছে আমি খুবি নগণ্য। কোথাই রাখবো ওর এতোটা ভালবাসা। কি দিয়ে শোধ করবো আমি। সুখের কান্নাটা আর থামাতে পারলাম না। চোখের সামনে থাকা স্বর্গটার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাদলাম। ও হাত দিয়ে চোখের জ্বল টুকু মুছে দিল।
ওকে হয়তো বাবা হবার সুখটা কোন দিনও আমি দিতে পারবো না। তবে আমার শেষ নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত এক বিন্দু কষ্ট পেতে দিবো না ওকে। তাতে আমার মরন হলেও হাসতে হাসতে মেনে নেবো সেই মরণটাকে।
আমি ভালবাসি নাহিদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে।

রবিবার, ১ মে, ২০১৬

ভাল লাগা ভালবাসা

কলেজের প্রথম বছর ছিল… পরিচয় হল… বন্ধুত্ব হলো… ভাল লাগলো… তারপর প্রেম নিবেদন… তারপর শুধুই ভালবাসা| নাহ্! এত নিরামিষ ছিল না আমাদের গল্প| এত নিরামিষ হলে হয়তো এভাবে সাতটা বছর পার করে দিতে পারতাম না দুজনে|
সেই সাত বছর আগের কথা… কিছুদিন হলো কলেজে ভর্তি হয়েছি| হঠাৎ অপরিচিত কারো একটা ই-মেইল নজরে পরলো| খুব সহজ একটা ধাঁধা লেখা ছিল ই-মেইলে| সাথে একটা মোবাইল নাম্বারো ছিল, আর লেখা ছিল যদি ধাঁধার উত্তর জানা থাকে তাহলে যেন সেই নাম্বারে পাঠিয়ে দিই| ধাঁধার উত্তর লিখে পাঠিয়ে দিলাম আর জানতে চাইলাম তার পরিচয়, তবে ই- মেইলের উত্তর ই-মেইলেই…
মোবাইলে দিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বারটা একটা অপরিচিত মানুষকে দিয়ে বিপদে পরবো নাকি!!?? কিছুদিন পর আবিষ্কার করলাম ছেলেটা আমার সেকশনেরই! কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কে সেই শাখামৃগ যে আমাকে এত দুশ্চিন্তায় ফেলে দূরে বসে মজা নিচ্ছে!!?? পরে জানতে পারলাম যার দিকে কখোনো চোখই পরেনি, যার নামটাও কখোনো জানা হয়ে ওঠেনি ছেলেটা সেই… সানিয়াত… সানিয়াত মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন|
বন্ধুত্ব হলো… খুব ভাল বন্ধুত্ব হলো… রাতে মোবাইলে কথা না বললে চলতোই না… ধীরে ধীরে কখোন যে বন্ধুত্বটা দুর্বলতা হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না! হয়তো নিজেকে বা ওকে বুঝতে দিতে চাইতাম না অনুভূতিটা| ভয় হতো… যদি বন্ধুত্বটাই হারিয়ে ফেলি!?
তবু মনের মাঝে কোন এক কোণায় হালকা ব্যথা অনুভূত হতো, যখোন ও ঐ সেকশনেরই সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার কথা বলতো| হালকা ব্যথা বললে বোধহয় ভুল হবে… আগুনের একটু আঁচ লাগলেই যেমন জ্বলা শুরু করে… আমারো তখোন ভেতরটা জ্বলতো! একটা কথা আছে না… “বুক ফাটে তাও মুখ ফোটেনা”… ঠিক ঐ রকম!
জানুয়ারী ২০০৫ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫… আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাড়ো হলো… আমাদের ছোট খাট পছন্দ অপছন্দ শেয়ার করা হলো| যদিও আমাদের ক্লাসমেটদের ধারণা আমরা তখোন থেকেই প্রেম করি| ধারণাটা আরো গাড়ো হয়েছিল যখন ও ক্লাসের একটা ছেলেকে আমাকে উত্তক্ত করার জন্য ঝাড়ি দিয়েছিল| ধারণাটা নি্শ্চিত সন্দেহের রূপ নেয় যখন আমি ওর হাতে কলেজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটা চিঠি ধরিয়ে দিই|
চিঠিতে কি লিখেছিলাম মনে নেই, তবে সেটা কোনো প্রেমপত্র ছিল না এটা নিশ্চিত… সেটা ছিল ওর ওপর আমার অভিমানের বহিঃপ্র্রকাশ মাত্র| ও আমাকে এখন প্রায়ই বলে চিঠিতে নাকি অসংখ্য বার আমি লিখছলাম “আমি তোমার খুব ভাল Friend হিসেবে বলছি…”| সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো... চিঠিটা ওর পকেটে ছিল... বৃষ্টিতে আমার চিঠিটা নাকি ভিজে একাকার|তার কিছুদিন পর আমি আমার ২য় বর্ষে কলেজ বদলিয়ে ফেললাম| ফিরে গেলাম আমার স্কুলেরই কলেজ শাখায়|
তারপর আমার মোবাইল হারিয়ে গেল… সাথে ওর নাম্বারটাও| সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ| মাঝেমাঝে ই-মেইল Check করতাম… যদি ও কিছু পাঠায়… কিন্তু দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই পেতাম না| নিজেকে সান্তনা দিতাম… এই বুঝি ভাল হলো… Out of sight, out of mind!

পর্ব : ২

জানুয়ারী ২০০৬ থেকে ২০০৬ ডিসেম্বর… এর মাঝে অনেক উত্থান পতন হয়েছে দুজনেরই… এসেছে কিছু পরিবর্তন… ৪ বছর বয়স বেড়েছে… কলেজ শেষ হয়েছে… ২০০৭ এর জানুয়ারী থেকে আমি মেডিকেল ছাত্রী হয়েছি আর ও হয়েছে ইঞ্জিনীয়ার ছাত্র| তখনো মাঝেমাঝে ই-মেইলCheck করতাম… হঠাৎ ২৯ জানুয়ারী ২০০৭ একটা ই-মেইল নজরে পরলো… from Md. Sarwer Hossain| আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না| ই-মেইলটা ওর নতুন Address থেকে পাঠিয়েছিল ওর Contact list এর সবাইকে| আমি আর সবাই এক হলাম!? এই ভেবে আর Reply করা হলোনা|
তারপর ২১ ফেব্রুয়ারী ২০০৭ আরেকটা ই-মেইল এলো| ই-মেইল পড়ে প্রথমে খুব রাগ হলো… কারণ as usual সেখানে আমাকে Jealous করানোর মত কথা লেখা ছিল| ই-মেইলের শেষ লাইন গুলো ছিল এরকম “SunSi dr ri porteSo khubi valo. amr amma Sune khub khuSi hoiSe. kau dr hoiSe Sunle amma khuSi hoya jay, amder aaSe paSe Sob to enginr tai. ajk to monehoy tmr bondo. ok valo thako.... bye… connection raikho amak vuila gaSo ? ? ! ? ! ! ! ?”
তখন কেন জানি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না… reply একটা করেই দিলাম| তারপর আবার শুরু হলো যোগাযোগ| ও যেমন আমাকে প্রায়ই Jealous করানোর মত কথা বলতো আমিও ওকে সব সময় Jealous করার চেষ্টা করতাম… কিন্তু ওর কোনো প্রতিক্রীয়াই ছিলনা! খুব রাগ হতো আমার!
২০০৮ এর ১৩ ফেব্রুয়ারী… আমি ওকে “Yahoo!” তে Chat-এ বেশ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, তোমার কাল কি কোনো Programme আছে?” ও বললো, “নাহ্, কাল কি Programme থাকবে? কেন থাকবে?” আমি বললাম, “তাহলে আমরা কি কাল TSC-তে দেখা করতে পারি?” আমি ভেবেছিলাম ও “না” বলবে| কিন্তু ও বললো “হ্যাঁ”!! বলে আমার বিপদ বাড়িয়ে দিল|
প্রচন্ড রকমের ভয় ভর করলো মাথায়| এতই ভয় আর উত্তেজনা পেয়ে বসলো আমায় যে আমার হারিয়ে যাওয়া মোবাইলের সাথে যে ওর মোবাইল নাম্বারটাও যে হারিয়ে গিয়েছে সেটাও ভুলে গিয়েছিলাম| আর হঠাৎ করে ওর নাম্বারটাও কিছুতেই মনে পড়ছিল না| কিন্তু ততক্ষনে আমরা Sign out করে ফেলেছি| হঠাৎ মনে পরলো একটা ডায়রীতে ওর নাম্বার লিখে রেখেছিলাম, কিন্তু কোনো লাভ হলোনা…
ডায়রীটা খুঁজে পেলাম না| তাই ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ TSC যাওয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বইমেলার মানুষের ভীরে আমরা দুজন দুজনকে খুঁজে পেলাম না| পরদিন “Yahoo!” তে ও আমাকে নাম্বার দিল… ঠিক হল ১৭ ফেব্রুয়ারী দেখা করবো| আবারো সেই ভয় আর উত্তেজনা পেয়ে বসলো আমায়|
১৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৮… তখন আমি হোস্টেলে থাকতাম| TSC গেলাম… একমাস ব্যাপি বইমেলা… প্রচন্ড মানুষের ভীর| আমি পৌঁছেই ওকে ফোন দিলাম… ও কাছেই কোথাও ছিল… ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বললো| এই ৫ মিনিটে আমার ভয় ক্রমোশ বেরেই চললো| মাথায় কত চিন্তা ভর করলো! এই প্রথম আমি আর ও কোথাও এভাবে দেখা করতে যাচ্ছি… কতদিন পর দেখবো ওকে… ২ বছরের বেশি… ও কি পাল্টে গেছে… নাকি সেই আগের মতই আছে… ওকে চিনতে পারবো তো বা ও আমাকে চিনতে পারবে তো!?
এরকম কত ভয়…! তারপর অতি প্রতিক্ষীত ৫ মিনিট শেষ হলো… দূর থেকে দেখেই চিনতে পারলাম ওকে| নাহ্! খুব বেশি পাল্টায়নি ও… তবে একটু মোটা হয়েছে… মোটা বললেও ভুল হবে… স্বাস্থ্যটা একটু ভাল হয়েছে| ও কাছে এলো… আসার পর আমি কিছুতেই ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না| ভয় অথবা লজ্জা… কিছু একটা কাজ করছিল| লজ্জা পাচ্ছিলাম হয়তো লজ্জা নারীর ভূষণ বলে, আর ভয়… কারণ… ও যদি বুঝে ফেলে আমার দুর্বলতা! সন্ধ্যা ৭.৩০ টা পর্যন্ত ছিলাম ওর সাথে|
ও ওর স্বভাব সুলভ খুব নরমাল আচরণ করছিল, আর আমি খুব চেষ্টা করছিলাম নরমাল হওয়ার… কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা! ও আমাকে রিকশায় করে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে গেল| হোস্টেলে ফেরার পর থেকে শুধু মনে হচ্ছিল ও কিছু বুঝলো না তো!!?? সত্যিই তাই… ও সেদিন বুঝে গিয়েছিল… কিন্তু ও আমাকে বুঝতেই দেয়নি যে ও বুঝতে পেরেছে|
একদিন কথায় কথায় মনে পড়লো আমি ওকে কলেজে থাকতে জোড়া ডলফিনের একটা শো-পিস Gift করেছিলাম| লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম… কি নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা আমি! ও বললো ওটা নাকি তখনি ওর Friend দের বিশেষ কৌতুহলের কারণে দুই টুকরা হয়ে গিয়েছিল| সাথে সাথে আমার মনটাও দুই টুকরা হয়ে গেল| তারপর ও বললো সেটা নাকি ও আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়েছে… তখন থেকে সেটা ওর Aquarium এ শোভা পাচ্ছে|
এই কথা শোনার পর আমার মন তো জোড়া লাগলোই… মনে হলো কোথা থেকে যেন হালকা একটা হাওয়া স্বজোরে একটা দোলা দিয়ে গেল| মনে হলো… তাহলে কি ওর ও মাঝে দুর্বলতাটা কাজ করে!!?? তারপর থেকে আবার শুরু হলো আমার “Mission : Making Him Jealous”| এবার বোধহয় কাজ হলো…
৩০ জুন ২০০৮… নাহ্! ১ জুলাই ২০০৮… ৩০ জুন ২০০৮ রাত ১২টার পর… সকালেই আমারAnatomy Prof Written exam| ও আমাকে চমকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “অনু, তুমি কি কোনো কারণে আমার প্রতি Weak?” যার সত্যিকার অর্থে মানে ছিল, “অনু, তুমি কি আমাকে ভালবাসো?” আমি কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম… আমার কি বলা উচিত যে আমি শুরু থেকেই Weak!!??
আমি বললাম… “কি হবে জেনে? তোমার কাছে আমার সব Problem এর Solution আছে, কিন্তু এই উত্তরের কোনো Solution নেই”| ও বললো… “বলেই দেখো… থাকতেও তো পারে”| আমি বললাম… “হ্যাঁ, আছে তোমার কাছে কোনো Solution?” ও বললো… “এভাবেই চলতে থাকি… কপালে থাকলে হবে”| নিজেকে খুব ছোট মনে হলো… মনে হলো “হে ধরণী! তুমি দ্বিধা হও, আমি তোমার ভেতর প্রবেশ করি”!

পর্ব : ৩ 

ভাবলাম এবার বুঝি বন্ধুত্বটাও হারালাম! ভাবলাম আমার ধারণা বোধহয় ভুল ছিল| কিন্তু না কিছুই শেষ হয়নি| ও খুব সহজেই যেকোনো ব্যপার সহজ করে ফেলতে পারে| আমরা আবার আমাদের চিরাচরিত Friendship-টাকেই ধরে রাখলাম|
২০ অগাস্ট ২০০৮… পরীক্ষা শেষে বাসায় আসলাম| ঐদিন রাতেও ১২টার পর ফোনে কথা হলো| হঠাৎ ও আমাকে বললো, “আচ্ছা অনু, ঐ যে ঐ টা একটু বলোতো”| আমি বললাম, “কি বলবো?” ও বললো, “ঐ যে তুমি যেটা Feel করো… ঐ যে কি যেন বলে না একজন আরেকজন কে”|
আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে ও আমাকে দিয়ে কি বলাতে চায়! ওর মুখে আমার নামের উচ্চারণ শুনলেই তো আমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়… আমি সেখানে একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে ওকে এই কথাটা বলি!? আমি অনেক “না না” করলাম পর… অনেক ঢং করলাম …ও আমাকে বললো, “বলো না একটু শুনি, দেখি কেমন লাগে!?” সব লজ্জার ডোর ছিড়ে বলেই ফেললাম… “I love you”… এত speed এ বলেছিলাম যে নিজেই বুঝতে পারিনি যে ও বুঝলো কিনা! বলেই ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম| সেই রাত অনেক লম্বা ছিল… ঘুম-ই আসলোনা !
২৩ অগাস্ট ২০০৮… রাত ১২টার বেশি বাজে… অর্থাৎ ২৪ অগাস্ট ২০০৮… খুব ভয়ে ভয়ে লজ্জায় লজ্জায় ওর ফোন ধরলাম| আবারো ও শুনতে চাইলো… এবারো অনেক ঢং করার পর বললাম… এবার ও শুনতে চাইলো পর পর তিনবার… আমিও লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলে দিলাম|
মনের ভেতরটায় অদ্ভূত একটা ব্যথা অনুভব করলাম এই মনে করে যে “তুমি কি একবারও বলবা না?” আমি যখন এই চিন্তায় মগ্ন তখন আচমকা কানে বেজে উঠলো ওর কণ্ঠস্বর… “অনু, তুমি আমাকে মারবা!”
জানিনা কোথ্থেকে এক ফোঁটা অশ্রু চোখের কোণে আশ্রয় নিল| ভাবলাম… তাহলে কি ফুরালো আমার তিন বছর ছয় মাসের অপেক্ষার প্রহর? আমি যখন আবারো ভাবনায় মগ্ন তখন আবার আচমকা কানে বেজে উঠলো ওর কণ্ঠস্বর… “ANU, I LOVE YOU”…………………………………… মনে হলো আমার কর্ণ কপাট ভেদ করে সুমধুর সুর প্রবেশ করলো| মনে হলো কেউ আমায় প্রেমের অমৃত সুধা গলধিকরণ করালো| আর সেই কেউ… আমার সানিয়াত মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন|
এখন ও আমাকে মাঝে মাঝে বলে, “তখনই (কলেজে পড়ার সময়) তোমার weakness টা সামনে আনতা, তাহলে আর এতদিন একা থাকতে হতো না… অবশ্য আমারই দোষ… আমি তখনই লাই দিলে তখনই এটা সামনে আসতো|” ওকে jealous feel করানোর কথা উঠলে বলে, “আমি তো জানতাম তুমি কি চাইতা... আর জানতাম বলেই jealous হতাম না আর তুমি আরো বেশি জ্বলতা… খুব মজা লাগতো!” ফাজিল কোথাকার!
তারপর কত ঝড় ঝাপটা গেল… দুজনের পরিবারে জানাজানি হলো| ওর মা-বাবা খুব সহজেই মেনে নিলেন| আর আমার মা-বাবা ছিলেন প্রচন্ড প্রেম বিরোধী ছিলেন| কিন্তু আমরা কোনোভাবেই হাল ছাড়িনি| আমরা জানতাম, আমার বাবা আমাকে প্রচন্ড ভালবাসেন… তাই তিনি অপরিচিত একজনের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে ভয় পাচ্ছিলেন| মা-বাবা ওর সাথে দেখা করলেন… কথা বললেন… Impressed হলেন|
তারপর আর কি! তারপর…. এক সাথে পথ চলা… মাঝে মাঝে একটু একটু ভালবাসার ঝগড়া… তারচেয়েও অনেক অনেক বেশি… সবকিছুর ঊর্ধে শুধুই আমাদের ভালবাসা

অভিমনী

বিয়ের অনুষ্ঠানে এক একা বসে আছে লিমা। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে সে। বিরক্ত লাগছে তার অনেক বেশি। আগেই জানতো এখানে এসে একা থাকতে হবে, তাই আসতেই চায়নি সে। কিন্তু মায়ের পিড়াপীড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোন কাজ না পেয়ে ফেসবুকে লগইন করলো। করেই দেখে অনলাইনে রাকিব, লিমার বয়ফ্রেন্ড !
- কি করো, জান ? ( লিমাকে অনলাইনে দেখামাত্রই রাকিবের মেসেজ )
- কিছু না। মেজাজ খারাপ এখন।
- হইছে টা কি ?
- কথা বলবা না।
- ওকে।
- ওকে মানে কি ?
- তুমিই তো বললা কথা বলতে না।
- তাই বলে আমার সাথে কথা বলবা না ?
- আরেহ আশ্চর্য তুমিই তো বললা !
- ও বুঝছি তুমি তো এখন মেয়েদের সাথে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত। করো করো যত ইচ্ছা চ্যাট করো।
- আজব তো। হু করতেছি আমি চ্যাট। তোমার কি তাতে ?
- কি ??????????
- জানো আমি এখন ১০ জন মেয়ের সাথে চ্যাট করতেছি !
প্রচন্ড রাগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে যায় লিমা !
ইচ্ছা করেই রাকিব কাজটা করে। লিমাকে রাগিয়ে দেয় সে। আর লিমাও একটু আহ্লাদী মেয়ে, মন মত কিছু না হলেও হয়েছে, প্রচন্ড রেগে যায় সে। বরাবরের মতই এখন রাগে ফুঁসছে সে। ফর্সা, গোলগাল চেহারাটা রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। একটু পরেই আবার ফেসবুকে গেলো। গিয়ে নিজের আইডি থেকে লগআউট করে রাকিবের আইডিতে গেলো। গিয়ে দেখে কিসের কি ! সে বাদে সর্বশেষ মেসেজিং করেছে তার বন্ধুদের সাথে। কোন মেয়ের সাথেই তার চ্যাটিং হয়নি। তারমানে মিথ্যা বলেছে সে ! আরেকদফা রেগে গেলো লিমা। আবার নিজের আইডিতে গিয়ে রাকিবকে মেসেজ দিলো, " আমার সাথে মিথ্যা কথা বললা কেন ? "
- তারমানে তুমি আমার আইডিতে লগইন করেছিলে ? ছি ছি ! না বলে অন্যের আইডিতে যাও, লজ্জা নাই তোমার ?
- কি ????????????
- এত কি কি করো কেন ?
- তোমার সাথে কথা নাই।
- আরেহ আজব !
রিপ্লাই দেয় না লিমা। রেগে মেগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেছে সে। একটু পরে আবার লগইন করে দেখে একটা লাভ স্টোরি দিয়েছে রাকিব, নায়ক যথারীতি আর্মি অফিসার !
- আচ্ছা তুমি এত আর্মি আর্মি করো কেন গল্পে ?
- এনি প্রব্লেম ?
- মানে কি ?
- মানে হচ্ছে আমার গল্পের প্লটের সাথে আর্মি অফিসারেরা বেশি খাপ খায়, তাই ওভাবে দেই। আমি ওভাবে কল্পনা করে লিখতে পছন্দ করি।
- না তুমি এভাবে বলো নাই !
- মানে ?
- তুমি প্রথমে অন্যভাবে বলেছ।
- আরেহ আজব।
- কি আজব ?
- তুমি ! নারায়ণগঞ্জের মেয়ে তো, একটু বেশি সন্দেহপ্রবণ ! সবসময় একটু বেশি বুঝে !
- তোমার সাথে কথা নাই।
- উফফ !! কিছু হইলেই খালি কথা নাই, কথা নাই বলে গান শুরু করে দিবে মেয়েটা !
- তুমি মুড়ি খাও।
- তুমি বিয়েতে গেছো না ?
- হুম।
- তাইলে তুমি ভালো করে মোরগ-পোলাও খাও ! তাইলে যদি মাথায় একটু বুদ্ধি হয় !
মেসেজ দেখে আবার রেগে গেলো লিমা। এবার আর কথাই নাই। সোজা আইডি ডি-অ্যাক্টিভ করে বের হয়ে গেলো।
পরদিন বিকালে পার্কে বসে আছে রাকিব। গতরাতে লিমাকে প্রচন্ড রাগিয়ে দিয়েছে সে ! যে কারণে মেয়েটা প্রথম প্রথম তার ফোনও ধরনি।
মোবাইলের মেসেজে অনবরত সরি বলার বলার পরে একবার ফোন ধরেছিল। ফোনেও অনেকবার সরি বলেছে, লিমা কোন কথা বলেনি। তাই তাকে বিকালে এখানে আসতে বলেছে। যতই কথা না বলুক রাকিব জানে লিমা না এসে পারবে না। যথা সময়েই লিমা এসে হাজির। রাকিবকে দেখেই, " তোমার সাথে কোন কথা নাই। " মুচকি হাসে রাকিব। রাগলে লিমাকে দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। তাই ইচ্ছা করেই সে তাকে রাগায়। আর সে ভালো করেই।জানে লিমার রাগ কি করে ভাঙ্গাতে হয় !
পকেট থেকে কিটক্যাটের একটা বড় প্যাকেট বের করে বললো, " ভেবেছিলাম তোমাকে দিবো কিন্তু এখন এটা দেওয়ার জন্য মনে হয় অন্য একজন মেয়ে খুঁজতে হবে !
" কি ? " চোখে পাকিয়ে বলে লিমা। " এটা আমার জন্য আনোনি ?
- এনেছিলাম তোমার জন্যই। কিন্তু তুমি তো নিতে চাও না ...
- ফাজিল।
আর রাগ ধরে রাখতে পারলো না লিমা। হেসে ফেললো সে। তার মধ্যে এখনো বাচ্চাদের মত চকলেটপ্রীতি কাজ করে। আর সেটা জানে রাকিব। লিমার রাগ ভাঙ্গাতে সে তাই চকলেটের ব্যবহারই করে !
এভাবেই তাদের খুনসুটির সমাপ্তি ঘটে যেটা গত দুই বছর ধরে প্রতিনিয়ত চলে আসছে !
পার্কে বসে রাকিবের কাঁধে মাথা রেখে চকলেট খাচ্ছে লিমা !
আর দুজনে নীরবে উপভোগ করছে পড়ন্ত বিকেলের আশ্চর্য সুন্দর, মায়াবী পরিবেশটা !
দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার এ দৃশ্যটা আশ্চর্য সুন্দর, সমস্ত সৌন্দর্যকে যেন হার মানিয়ে যায় ! অসাধারণ সুন্দর আর মায়াবী পড়ন্ত বিকেলও এ দৃশ্য দেখে যেন হিংসায় মরে যায় !


ছাত্র জীবনের চেয়ে মধুরজীবনআর নেই।কথাটার বাস্তবিক প্রমানিতহয় যখন ছাত্রজীবন অতীত হয়ে যায় | — হযরত সুলাইমান (আঃ)