মুক্ত কথা
সোমবার, ৯ মে, ২০১৬
বুধবার, ৪ মে, ২০১৬
'নাহিদ' - সুদর্শন আর একেবারেই পাগলাটে একটা ছেলে। সারাদিন কাধে একটা গীটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভার্সিটির সবাই ওকে গীটার-বয় বলেই ডাকে। নেকা মেয়ে গুলা যেন নাহিদ বলতেই অজ্ঞান। অথচ দুই চক্ষে সহ্য হয়না ছেলেটাকে আমার। বি.বি.এ -৩য় বর্ষের ছাত্রী আমি। নাহিদ আমার ১বছর এর সিনিয়র। কোন কথাবার্তা ছাড়াই ও হঠাৎ একদিন আমকে প্রপস করে বসলো। কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলাম। পেছন ঘুর ঘুর করে বিরক্ত করার ছেলে ও না। কোথা থেকে যেন আমার নাম্বারটা যোগাড় করেছে।
প্রতিদিন রাতে শুধু একটা করে মেসেজ করত কখনো ফোন করেনি। কোন রিপ্লাই না দিয়ে শুধু ওর মেসেজ গুলো পড়তাম প্রতিদিন। ব্যাপারটা ধীরে ধীরে ভাল লাগতে শুরু করলো। মনের আড়ালেই কখন ভাল লাগার বীজ বপন করে বসে আছি বুজতেই পারিনি।
পরপর তিনদিন ওর কোন মেসেজ না পেয়ে কেমন যেন অস্থির লাগছিল। পরদিন ভার্সিটিতে মনে মনে ওকে খুজতে থাকলাম। হঠাৎ দেখি সিমির খুব কাছাকাছি বসে ওকে গান শোনাচ্ছে। বুকের ভেতর চেপে থাকা আগুনটা যেন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। কিছু চিন্তা না করেই সবার সামনে বলে দিলাম ওকে ভালবাসার কথা। সাথে সাথে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পেছন থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে দিল।
খানিকটা অবাক হলাম। পরে জানতে পারলাম মেসেজ না করা, আমাকে জেলাস করা, পুরোটাই সাজানো ছিল। আর তার প্রধান হাতিয়ার ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী সিমি। চোখের জলটা থামাতে পারলাম না। সবার সামনেই কেদে দিলাম। একটা কান্না মানুষকে এতটা সুখ দিতে পারে জীবনে প্রথম অনুভব করলাম।
শুরু হল ভালবাসার আকাশে কষ্ট সুখের সাত রঙ মিশিয়ে একি স্বপ্ন দুটি হৃদয় দিয়ে আঁকা। ও আমাকে সুখ পাখি বলে ডাকে। ওর পাগলামি গুলা যেন একি সাথে আমকে কাদাই আবার হাসাই। অদ্ভুত একটা অনুভুতি।
আমকে নিয়ে ওর গান। স্বপ্নের ভেলায় চড়ে তারার দেশে যাওয়া। হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। মাঝ রাতে আমকে দেখার নাম করে আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা। ক্লাস ফাকি দিয়ে মুভি দেখতে যাওয়া। একই স্বপ্ন হাজার বার ভেঙ্গে নতুন করে গড়া। সব কিছু মিলিয়ে যেন আমার একটা পৃথিবী সুখের স্বর্গ ও। দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। ওর বি.বি.এ শেষ হল আর আমি ৪র্থ বর্ষে উঠলাম। যে ভয়টা বুকের ভেতর সব সময় কাজ করত সেটাই হল। আমার আর নাহিদ এর সম্পর্কের কথাটা বাসাই জানা জানি হয়ে গেল।
আব্বু আম্মুর ইচ্ছের বাইরে আপু পালিয়ে গিয়ে তার ক্লাস-মেট সোহেল ভাইয়াকে বিয়ে করেছিল। ওদের ৪বছর এর রিলেশন বিয়ের এক বছরের মাথাই ছাড়াছাড়ি। এ ব্যাপারটাই যেন আমার স্বাধীনতার একমাত্র ঘাতক। সাময়িক ভাবে আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ। ফোনটাও আব্বুর কাছে। এক কথায় বন্দি আমি।
আপুর ব্যাপারটার পর আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছিল এখনো সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আব্বুর ইচ্ছের বাইরে কিছু বলা মানে তাকে মৃত্যুর পথে একধাপ এগিয়ে নেয়া। কিছুই বলতে পারলাম না।
এক সপ্তাহের মধ্যে আমার বিয়ে ঠিক করলো আব্বুর ব্যবসায়ী বন্ধু রাজ্জাক আঙ্কেলের ছেলে সুমন এর সাথে। নিঃশব্দে কাদা ছাড়া কিছুই যেন করার নেই আমার।
এদিকে নাহিদ পাগল এর মত চেষ্টা করছে আমার সাথে যোগাযোগ করার। কোন উপায় না পেয়ে সিমিকে আমার বাসায় পাঠালো খোজ নেবার জন্য। মানুষটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে। এত বড় অন্যায় কি করে করবো আমি। কি করে কাদাবো এই মানুষটাকে। ঠিক করলাম পালিয়ে যাব। সবাইকে ফাকি দিয়ে অনেক কষ্ট করে বাসা থেকে বেরও হলাম। কিন্তু আপুর চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মুর কষ্ট লজ্জা সব কিছুর ছবিটা চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠলো। পারলাম না।
একটা ফোন ফ্যাক্স এর দোকান থেকে কাদতে কাদতে নাহিদ কে সরি বলে অর্ধেক রাস্তা থেকেই আবার বাসাই ফিরে আসলাম। এসে দেখি প্রত্যাশা অনুরূপ বাসার সবাই চুপচাপ বসে আছে। যে আব্বু আমকে কোন দিন ধমক দিয়ে কথা বলিনি সে আব্বু আমার গায়ে হাত তুললো। সারা রাত কাদলাম। কান্নাই যেন একমাত্র সঙ্গী এখন। না পারছি আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে না পারছি নাহিদকে কাদাতে।
পরদিন সকালে রাজ্জাক আঙ্কেল এর একটা ফোন আমার জীবনটাতে একই সাথে মুক্তি আর পঙ্গুত্ব দান করলো। ডাক্তার এর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী আমি কোনদিন মা হতে পারবো না। বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। কাঁদবো না মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলব বুজতে পারলাম না। শুধু স্থব্দ হয়ে থাকলাম।
নাহিদ এর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখ আমার নেই। সিমির মাধ্যমে ও সব কিছু জানলো। আর সব জেনে শুনেই ওর আব্বুকে দিয়ে আবারও বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল আমার বাসাই। প্রথম বার ফিরিয়ে দিলেও এবার আর পারল না। কারণটা সহজ। আব্বু আম্মু স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা লজ্জিত হয়ে নাহিদ এর এক আকাশ সমান ভালবাসার কাছে হার মানল। পাওয়া না পাওয়াই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের আর সুখের দিন এটা।
পরদিন নাহিদ এর অনুরোধেই আব্বু আম্মুর অনুমতি নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম । কথা বলার শক্তিটা যেন হারিয়ে ফেলছি। কাপতে কাপতে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল- আমি শুধু তোমাকে চাই হেনা আমার আর কিচ্ছু দরকার নেই বিশ্বাস করো আমার শুধু তোমাকে হলেই চলবে। বল আমকে আর কখনো ছেড়ে যাবা নাতো ?উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না। বুক ফেটে কান্না এলো। ওর এই সীমাহীন ভালবাসার কাছে আমি খুবি নগণ্য। কোথাই রাখবো ওর এতোটা ভালবাসা। কি দিয়ে শোধ করবো আমি। সুখের কান্নাটা আর থামাতে পারলাম না। চোখের সামনে থাকা স্বর্গটার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাদলাম। ও হাত দিয়ে চোখের জ্বল টুকু মুছে দিল।
ওকে হয়তো বাবা হবার সুখটা কোন দিনও আমি দিতে পারবো না। তবে আমার শেষ নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত এক বিন্দু কষ্ট পেতে দিবো না ওকে। তাতে আমার মরন হলেও হাসতে হাসতে মেনে নেবো সেই মরণটাকে।
আমি ভালবাসি নাহিদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে।
সোমবার, ২ মে, ২০১৬
রবিবার, ১ মে, ২০১৬
ভাল লাগা ভালবাসা
অভিমনী
বিয়ের অনুষ্ঠানে এক একা বসে আছে লিমা। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে সে। বিরক্ত লাগছে তার অনেক বেশি। আগেই জানতো এখানে এসে একা থাকতে হবে, তাই আসতেই চায়নি সে। কিন্তু মায়ের পিড়াপীড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোন কাজ না পেয়ে ফেসবুকে লগইন করলো। করেই দেখে অনলাইনে রাকিব, লিমার বয়ফ্রেন্ড !
- কি করো, জান ? ( লিমাকে অনলাইনে দেখামাত্রই রাকিবের মেসেজ )
- কিছু না। মেজাজ খারাপ এখন।
- হইছে টা কি ?
- কথা বলবা না।
- ওকে।
- ওকে মানে কি ?
- তুমিই তো বললা কথা বলতে না।
- তাই বলে আমার সাথে কথা বলবা না ?
- আরেহ আশ্চর্য তুমিই তো বললা !
- ও বুঝছি তুমি তো এখন মেয়েদের সাথে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত। করো করো যত ইচ্ছা চ্যাট করো।
- আজব তো। হু করতেছি আমি চ্যাট। তোমার কি তাতে ?
- কি ??????????
- জানো আমি এখন ১০ জন মেয়ের সাথে চ্যাট করতেছি !
প্রচন্ড রাগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে যায় লিমা !
ইচ্ছা করেই রাকিব কাজটা করে। লিমাকে রাগিয়ে দেয় সে। আর লিমাও একটু আহ্লাদী মেয়ে, মন মত কিছু না হলেও হয়েছে, প্রচন্ড রেগে যায় সে। বরাবরের মতই এখন রাগে ফুঁসছে সে। ফর্সা, গোলগাল চেহারাটা রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। একটু পরেই আবার ফেসবুকে গেলো। গিয়ে নিজের আইডি থেকে লগআউট করে রাকিবের আইডিতে গেলো। গিয়ে দেখে কিসের কি ! সে বাদে সর্বশেষ মেসেজিং করেছে তার বন্ধুদের সাথে। কোন মেয়ের সাথেই তার চ্যাটিং হয়নি। তারমানে মিথ্যা বলেছে সে ! আরেকদফা রেগে গেলো লিমা। আবার নিজের আইডিতে গিয়ে রাকিবকে মেসেজ দিলো, " আমার সাথে মিথ্যা কথা বললা কেন ? "
- তারমানে তুমি আমার আইডিতে লগইন করেছিলে ? ছি ছি ! না বলে অন্যের আইডিতে যাও, লজ্জা নাই তোমার ?
- কি ????????????
- এত কি কি করো কেন ?
- তোমার সাথে কথা নাই।
- আরেহ আজব !
রিপ্লাই দেয় না লিমা। রেগে মেগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেছে সে। একটু পরে আবার লগইন করে দেখে একটা লাভ স্টোরি দিয়েছে রাকিব, নায়ক যথারীতি আর্মি অফিসার !
- আচ্ছা তুমি এত আর্মি আর্মি করো কেন গল্পে ?
- এনি প্রব্লেম ?
- মানে কি ?
- মানে হচ্ছে আমার গল্পের প্লটের সাথে আর্মি অফিসারেরা বেশি খাপ খায়, তাই ওভাবে দেই। আমি ওভাবে কল্পনা করে লিখতে পছন্দ করি।
- না তুমি এভাবে বলো নাই !
- মানে ?
- তুমি প্রথমে অন্যভাবে বলেছ।
- আরেহ আজব।
- কি আজব ?
- তুমি ! নারায়ণগঞ্জের মেয়ে তো, একটু বেশি সন্দেহপ্রবণ ! সবসময় একটু বেশি বুঝে !
- তোমার সাথে কথা নাই।
- উফফ !! কিছু হইলেই খালি কথা নাই, কথা নাই বলে গান শুরু করে দিবে মেয়েটা !
- তুমি মুড়ি খাও।
- তুমি বিয়েতে গেছো না ?
- হুম।
- তাইলে তুমি ভালো করে মোরগ-পোলাও খাও ! তাইলে যদি মাথায় একটু বুদ্ধি হয় !
মেসেজ দেখে আবার রেগে গেলো লিমা। এবার আর কথাই নাই। সোজা আইডি ডি-অ্যাক্টিভ করে বের হয়ে গেলো।
পরদিন বিকালে পার্কে বসে আছে রাকিব। গতরাতে লিমাকে প্রচন্ড রাগিয়ে দিয়েছে সে ! যে কারণে মেয়েটা প্রথম প্রথম তার ফোনও ধরনি।
মোবাইলের মেসেজে অনবরত সরি বলার বলার পরে একবার ফোন ধরেছিল। ফোনেও অনেকবার সরি বলেছে, লিমা কোন কথা বলেনি। তাই তাকে বিকালে এখানে আসতে বলেছে। যতই কথা না বলুক রাকিব জানে লিমা না এসে পারবে না। যথা সময়েই লিমা এসে হাজির। রাকিবকে দেখেই, " তোমার সাথে কোন কথা নাই। " মুচকি হাসে রাকিব। রাগলে লিমাকে দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। তাই ইচ্ছা করেই সে তাকে রাগায়। আর সে ভালো করেই।জানে লিমার রাগ কি করে ভাঙ্গাতে হয় !
পকেট থেকে কিটক্যাটের একটা বড় প্যাকেট বের করে বললো, " ভেবেছিলাম তোমাকে দিবো কিন্তু এখন এটা দেওয়ার জন্য মনে হয় অন্য একজন মেয়ে খুঁজতে হবে !
" কি ? " চোখে পাকিয়ে বলে লিমা। " এটা আমার জন্য আনোনি ?
- এনেছিলাম তোমার জন্যই। কিন্তু তুমি তো নিতে চাও না ...
- ফাজিল।
আর রাগ ধরে রাখতে পারলো না লিমা। হেসে ফেললো সে। তার মধ্যে এখনো বাচ্চাদের মত চকলেটপ্রীতি কাজ করে। আর সেটা জানে রাকিব। লিমার রাগ ভাঙ্গাতে সে তাই চকলেটের ব্যবহারই করে !
এভাবেই তাদের খুনসুটির সমাপ্তি ঘটে যেটা গত দুই বছর ধরে প্রতিনিয়ত চলে আসছে !
পার্কে বসে রাকিবের কাঁধে মাথা রেখে চকলেট খাচ্ছে লিমা !
আর দুজনে নীরবে উপভোগ করছে পড়ন্ত বিকেলের আশ্চর্য সুন্দর, মায়াবী পরিবেশটা !
দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার এ দৃশ্যটা আশ্চর্য সুন্দর, সমস্ত সৌন্দর্যকে যেন হার মানিয়ে যায় ! অসাধারণ সুন্দর আর মায়াবী পড়ন্ত বিকেলও এ দৃশ্য দেখে যেন হিংসায় মরে যায় !

